Get the Latest News & Videos from News24 > রাজনীতি > বাবা রাজনীতির প্রয়োজন নেই, ফিরে এসো: আসলাম চৌধুরীর মেয়ে উজমা

অনলাইন ডেস্ক:- বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরীর কারাবরণের ২০০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। ২০১৬ সালে গ্রেফতারের পর দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ধরে তিনি কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে। কবে তার মুক্তি হবে জানা নেই। পরিবারের দাবি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়েছেন আসলাম। এ কারণে জামিন হলেও তাকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আসলামের রাজনৈতিক ভবিষ্যত অন্ধকার। পরিবারের পক্ষ থেকে রাজনীতিতে থাকা নিয়ে চাপে আছেন। 
সম্প্রতি আসলাম চৌধুরীর মেয়ে মেহরীন আনহার উজমা ফেসবুকে হৃদয়বিদারক এক স্ট্যাটাস দিয়ে বাবার মুক্তির আকুতি জানিয়েছে।

সে স্ট্যাটাসে মেহরীন আনহার উজমা প্রশ্ন রাখেন- আপনাদের কাছে কি মনে হয় না ‘দু’হাজার আট দিন’ অনেক বেশি সময়, একজন নির্দোষ মানুষকে বন্দি করে রাখার জন্য?
উজমার স্ট্যাটাসটি পাঠকের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো-

৩০ এপ্রিল ২০২১ – বাবা, গত পাঁচ বছরের মতই আজ তোমার টুমপিল তার ২০তম জন্মদিন কাটাবে তোমায় ছাড়া। 

পাঁচটি বছর পরেও ফিরে পাইনি তোমাকে। 

বাবা, রাজনীতির প্রয়োজন নেই, আমাদের কাছে ফিরে এসো। তোমার প্রতীক্ষায় আমি  আর মা।

উজমা আরও লিখেছেন, আস্থা, ভরসা আর পরম নির্ভরতার নাম ‘বাবা’।  প্রতিটি সন্তানের কাছেই বাবা মানে শক্তি আর সাহস। বাবা মানে একটু শাসন, অনেক ভালোবাসা। বাবা সেই গাছের ছায়া যে ছায়ায় সন্তান বেঁচে থাকার এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার শক্তি পায়।  শত আবদার আর নির্মল শান্তির জায়গাটা হলো বাবা। 

আমার বাবা মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী এফ সি এ একজন সমাজকর্মী। শুনেছি ছাত্রজীবন থেকে দু:খী মানুষের পাশে থাকতেন।  আমার জন্মের পর থেকে দেখে আসছি আমার বাবা নিজ এলাকায় কত মানুষের কর্মের সংস্থান করেছেন। পাশাপাশি এলাকায় লায়নিজমের মাধ্যমে এলাকার শত শত মানুষকে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। মেডিকেল ক্যাম্প, বিভিন্ন ছাত্রদেরকে বৃত্তি প্রদানসহ, পরামর্শ দিয়ে উৎসাহ দিতেন পড়ালেখা করার জন্য। বাবার জীবনের এক ও অভিন্ন চিন্তাধারা হচ্ছে, কাউকে কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে ঠকানো যাবে না।
বাবার এখন অনেক ব্যাংক ঋণ। বাবা বলতেন আমি যদি ২/৩ বছর স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করতে পারি তাহলে আমার এ সমস্যা দূর হয়ে যেতো। সেজন্য আমার বাবা সহ আমরা চাই স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করে আবার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুক এবং ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক।  আমি বলবো আমার বাবা যদি সুযোগ পায় অল্প সময়ের মধ্যে তার দৃঢ়চিত্ত এবং মেধার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে সফল হবে। 
বাবা আমার রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন কোনো অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশে নয়। বরং বৃহত্তর পরিসরে মানুষের সেবা করার জন্য। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বাবা আমার, দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে দিনাতিপাত করে চলেছেন বিনিময়ে অর্জন করেছেন ‘ঋণখেলাপি’ পদবি।

উজমা আরও লিখেছেন, আমি আমার বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। তাই আমাদের অঢেল অর্থ সম্পদের প্রয়োজন নেই। আমি চাই, স্বাভাবিক ব্যবসা বানিজ্য করে এবং তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দেওয়া হোক।
বাবা তুমি প্রয়োজনে রাজনীতি থেকে সাময়িক অবসর নাও। চূড়ান্ত অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত একান্ত তোমার বাবা। তবুও তুমি এ সময়ে আমার পাশে আমার কাছে ফিরে আসো।  তোমাকে আমার আর মায়ের অনেক বেশি প্রয়োজন।

তিনি লিখেন, আমার বাবার সঙ্গে লায়নিজমের সুবাদে অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, ব্যবসায়িক সুবাদে চায়না, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা এবং পর্যটক হিসাবে ভারত, ব্যাংকক, ফ্রান্স, স্পেন, ভ্রমণ করেছি। আমি দেখেছি আমার বাবার বন্ধুবৎসল মনোভাব। সব বাবাই শাসনে কঠোর, ভালোবাসাতে  কোমল, স্নেহে উদার, ত্যাগে অগ্রগামী। যদিও আমি দীর্ঘ সময় ধরে পিতৃত্বের স্নেহ, মায়া, ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে চলেছি। আমি যখন ‘ও’ লেভেল দেবো তার আগে থেকে বাবা কারাগারে বন্দি। কারাগারে থাকলেও আমার বাবা আমাকে সাহস দিতেন।  পড়ালেখার জন্য উৎসাহ দিতেন। 
আর সেই আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। এর মাঝে চলে গেছে পাঁচটি বছর। আমিই জানি পাঁচটি বছর কত দীর্ঘ। আমার এই বেড়ে উঠার সময়টাতে বাবার সান্নিধ্য আমার অনেক বেশি প্রয়োজন। আমি বঞ্চিত হচ্ছি আমার অভিজ্ঞ বাবার সুপরামর্শ থেকে। এই মুহূর্তে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সুপরামর্শ খুবই প্রয়োজন। জীবনের এ চলার পথে, যে সময়টাতে একটা মেয়ের বাবাকে খুব প্রয়োজন তখন বাবা আমার কাছ থেকে অনেক অনেক দূরে। 

উজমা আবেগী ভাষায় লিখেন, জানো বাবা, আমরা কেউ ভালো নেই। আমি তোমাকে অনেক মিস করছি।  জানি বাবা তুমিও ভালো নেই, আমাদেরকে ছেড়ে।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলায় বারবার বাবাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমার জীবনের গড়ে ওঠার এ সময়টাতে বাবার সঠিক সিদ্ধান্ত এবং পরামর্শ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আপনাদের কাছে কি মনে হয় না ‘দু’হাজার আট দিন’ অনেক বেশি সময়, একজন নির্দোষ মানুষকে বন্দি করে রাখার জন্য? 
আমার মা ও আমার ভবিষ্যতসহ বাবার চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমাদের গোটা পরিবার অস্থির অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। অন্যের সান্ত্বনা শুধু বাহ্যিক অশ্রুই মুছতে পারে ভেতরের ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ের কান্না কেউ শুনতে পায়না। সারাক্ষণ অন্তর জুড়ে একটা হাহাকার বিরাজ করছে।  

উজমা লিখেন, আমার বাবা সাবেক কলেজ অধ্যাপক, সাবেক লায়ন্স গভর্নর, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরীর অবিলম্বে মুক্তি চাই। 

ফিরে এসো বাবা। 

তোমার প্রতীক্ষায় আমি আর মা।

প্রসঙ্গত, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৬ সালে গ্রেফতার হন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরী।  গ্রেফতারের পর থেকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছেন তিনি।

নিউজ২৪.ওয়েব / ডেস্ক / রূপা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *