Get the Latest News & Videos from News24 > বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি > পাতে এবার যোগ হলো পুষ্টিকর মাছের পাউডার

অনলাইন ডেস্ক:-মাছ ভাজা, মুড়িঘন্ট, ছোট মাছের চচ্চড়ি- বাঙালির নিত্য আহার। ভোজন রসিক বাঙালির পাতে এবার যোগ হলো পুষ্টিমান সমৃদ্ধ মাছের পাউডার।

সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তৈরি করেছেন পুষ্টিসমৃদ্ধ মাছের পাউডার। খাদ্য নিরাপত্তার সকল মানদণ্ড বজায় রেখে পাউডারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের ল্যাবে তৈরি করা হয়েছে। ডাল, আলু, কচু শাক, লাল শাক, বেগুন, শিম, লাউ, চাল কুমড়া, ফুল কপি, মুলা, কচুমুখী, শিমের বিচির সঙ্গে রান্না ছাড়াও ভর্তা হিসেবে ফিশ পাউডার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের তিনটি অঞ্চল লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ১২০ পরিবারের প্রায় ৬ শতাধিক সদস্যদের মধ্যে সাপ্তাহিক জনপ্রতি ৪০ গ্রাম হারে গত ১৬ সপ্তাহ ধরে এই পাউডার বিতরণ করা হয়। নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে অংশগ্রহণকারী নারীরা বিশেষ প্রণোদনা পেয়েছেন।

গবেষণার প্রয়োজনে ২৪০ পরিবারের কিশোরী মেয়েদের রক্তের নমুনায় আয়রন, জিংক, ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়েছে এবং ১৮ সপ্তাহ পর আগামী মার্চে পুনঃ নমুনায়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা জানিয়েছেন।

শুক্রবার লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার দিনব্যাপী মাঠ দিবস ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৪০ পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয়রা অংশগ্রহণ করেন।

সভায় বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. হানিফ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. দিদার-উল- আলম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. মো. ফারুক উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

অনুষ্ঠানের মূল আলোচনায় ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক (পুষ্টি) ড. মো. মনিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন রামগতি পৌরসভার মেয়র মেজবাহ উদ্দিন, নোয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল মোতালেব, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি।

সভায় প্রধান অতিথি উপাচার্য বলেন, নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সাফল্য অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি উক্ত গবেষণা কার্যক্রমকে আরো বেগবান ও জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি প্রফেসর ড. ফারুক উদ্দিন বলেন, পুষ্টিমান সমৃদ্ধ মাছের পাউডার অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে। এটি সস্তা ও সহজে সংরক্ষণ উপযোগী বিধায় রোহিঙ্গাদের মতো আর্তপীড়িত মানুষকে খাদ্য সাহায্য হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।

ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, ফিশ পাউডার ব্যবহারের যে জনপ্রিয়তা আজকে আমরা লক্ষ্য করলাম তা আমাকে আশাবাদী করে তুলেছে। আগামী দিনে প্রজন্মের পুষ্টি চাহিদা রোধ ও উন্নত জাতি গঠনে মাছের তৈরি পুষ্টি পাউডার অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।

বক্তারা মাছের পাউডারের স্বতঃস্ফূর্ত ব্যবহারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সুবিধাভোগীদের একজন কিশোরী সোনিয়া আকতার বলেন, আগে মাছের মাথা ও লেজ কে খাবে তা নিয়ে মন কষাকষি হতো কিন্তু পাউডারের খাবার অন্য খাবার থেকে সুস্বাদু ও সকলে সমান ভাগ পায়।

একজন কিশোরীর মা রিনা বেগম বলেন মাছের পুষ্টি পাউডার দিয়া রান্না খাবার আমাদের নতুন নতুন আইটেম যুক্ত করার সুযোগ করে দিয়েছে এবং আশে-পাশে পাড়া-পড়শির অনেক আগ্রহ।

গবেষক দলের সদস্য ড. শহীদ সরোয়ার ও শুভ ভৌমিক বলেন, ফিশ পাউডার নিরাপদ পুষ্টি গুনে অন্যান্য মাছের থেকে অনেক উন্নত। বিশ্বাস করি এটি কিশোরী এবং অন্যান্য সুবিধা বঞ্চিতদের সংকট সময়ে উপকারে আসবে।

প্রকল্পের গবেষণ সহযোগী আবদুল আজিজ ও সাইদুজ্জামান সাব্বির বলেন, আমরা অংশগ্রহণকারী পরিবারের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করেছি যা সত্যিই আশা ব্যঞ্জক।

প্রধান গবেষক ড. আবদুল্লাহ-আল মামুন ফিশ পাউডার স্থায়িত্বশীল ব্যবহারের আশাবাদী এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করেন।

অনুষ্ঠানে ৪০ পরিবারের নারী ও কিশোরীরা ফিশ পাউডার দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার ও খাবার তৈরি প্রযুক্তি প্রদর্শন করেন।

নিউজ২৪.ওয়েব/ডেস্ক/আয়েশা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *