Get the Latest News & Videos from News24 > অপরাধ ও দুর্নীতি > ১ বছরেও জট খোলেনি রিফাত হত্যার রহস্যের

অনলাইন ডেস্ক: বহুল আলোচিত বরগুনার শাহনেওয়াজ রিফাত (রিফাত শরীফ) হত্যার এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে কাল। এই দিনে বরগুনার কলেজ রোড এলাকায় স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। এই নির্মমভাবে হত্যার পর থেকে দুর্বিষহ দিন কাটছে রিফাতের পরিবারের। হত্যাকারীদের ফাঁসি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন তারা। 

আইনজীবীরা বলছেন, করোনার ক্রান্তিকাল কাটিয়ে উঠলেই শেষ হবে বিচার। তবে এ হত্যার সময় ওঠা মাদকসহ, ক্ষমতাসীন দলের মধ্যক্যার দ্বন্দ্ব, যোগসাজশ নিয়ে ওঠা অভিযোগসহ রিফাতকে হত্যার কারণের জট খোলেনি আজো।

তখন জানা যায়, ফেসবুকভিত্তিক ০০৭ নামের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে শাহনেওয়াজ রিফাতকে (রিফাত শরীফ) হত্যার পরিকল্পনা করেন হত্যাকারীরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনার কলেজ রোড এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। এই গ্রুপটির নামকরণ করা হয়েছিল জেমস বন্ড সিরিজের ০০৭ নামের সঙ্গে মিল রেখে। বন্ড গ্রুপের প্রধান ছিলেন নয়ন বন্ড এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরায়েজী গ্রুপটি পরিচালনা করতেন। 

বরগুনার কলেজ রোড এলাকায় ২০১৯ সালের ২৬ জুন সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও উপস্থিত শত শত মানুষের সামনে কুপিয়ে খুন করা হয় শাহনেওয়াজ রিফাতকে (রিফাত শরীফ)। এ ঘটনায় ২৭ জুন ১২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। 

বিজ্ঞাপনটি দেখতে ক্লিক করুন

এক এক করে যখন আসামীরা গ্রেপ্তার হচ্ছিল ঠিক সে মুহূর্তে ২ জুলাই ভোরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন মামলার প্রধান আসামী সাব্বির আহমেদ নয়ন (নয়ন বন্ড)। 

ঘটনা নতুন মোড় নেয় ১৬ জুলাই। এই দিন সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে পুলিশ লাইনে নিয়ে এসে রাতে রিফাত শরীফ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর ২৮ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসেন মিন্নি। 

১ সেপ্টেম্বর মিন্নিকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামী করে দুই ভাগে বিভক্ত মামলার চার্জশিট দেয় পুলিশ। বর্তমানে মামলাটি বরগুনা জেলা দায়রা জজ আদালত ও শিশু আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। 

দায়রা ও জজ আদালতে ৭৬ স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। শিশু আদালতে মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ এখনো হয়নি। করোনার ক্রান্তিকাল কেটে গেলে আবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। 

এ মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক আসামীদের মধ্যে মিন্নি ও অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামীদের মধ্যে সাতজন জামিনে রয়েছেন। বাকিরা কারাগার ও যশোর শিশু কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক আসামী মুসা এখনো পলাতক রয়েছে। 

নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুর পরে আমাদের পরিবারের সদস্যদের দিনগুলি খুবই দুর্বিষহ কেটেছে। একমাত্র আল্লাহপাকই জানেন কীভাবে আমরা দিনগুলি পার করেছি। সরকারের প্রতি আমার আকূল আবেদন যাতে এই মামলাটির বিচারকার্য শেষ করে দ্রুত রায় দেওয়া হয়। আমি নিজেই হৃদরোগাক্রান্ত তাই আমি যেন আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে পারি। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার ছেলে মারা গেছে কিন্তু আমার পাশে আমি কাউকে পাইনি। দেশে এত দাতা সংস্থা, এত মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে, কিন্তু তারা কেউ আমার পাশে দাঁড়ায়নি। 

মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষি থেকে আসামী হওয়া নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, সারাদেশের মানুষ দেখেছে আমার মেয়ে রিফাতকে বাঁচাতে অস্ত্রের মুখে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কীভাবে লড়েছেন। মামলার বিচাককার্য শেষ হলে আমার মেয়ে নিরাপরাধ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পাবে। 

শিশু আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি(পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, শিশু আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ব্যতীত সব স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। কভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের কারণে আদালতের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। করোনার ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে আদালত স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শুরু হলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিচারকার্য শেষ হবে। 

বরগুনা জেলা দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি(পিপি) ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক আসামীদের বিরুদ্ধে ৭৬ স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলাটি এখন আত্মপক্ষ সমর্থনের অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু না হলে এত দিনে হয়ত মামলাটিতে বিজ্ঞ আদালত রায় দিতেন। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি পরিচালনা করেছি। আদালতের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া শুরু হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এ মামলার রায় হবে বলে আমরা আশাবাদী। 

সূত্র: দেশ রূপান্তর

নিউজ২৪.ওয়েব/ডেস্ক/মৌ দাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *