Get the Latest News & Videos from News24 > অপরাধ ও দুর্নীতি > পাপিয়ার মোবাইল কললিস্টে ১১ মন্ত্রী, ৩৩ এমপির নাম্বার

অনলাইন ডেস্ক: নরসিংদীর বহুল আলোচিত জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়াকে গত শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিমানবন্দর থেকে র‌্যাব-১ গ্রেপ্তার করে। গতকাল তাকে আদালতে তোলা হলে তার ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে যে, গ্রেপ্তারের পর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা পাপিয়ার মোবাইল ফোনগুলো জব্দ করেছে।

পাপিয়ার জব্দ করা মোবাইল ফোনগুলোতে অনেক ভিআইপির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের তথ্য পেয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, পাপিয়ার মোবাইলে প্রায় ১১ মন্ত্রীর মোবাইল নাম্বার পাওয়া গেছে। পাপিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত এই মোবাইল নাম্বারে বিভিন্ন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন।

এছাড়াও পাপিয়ার মোবাইলে আরো ৩৩ এমপির তালিকা পাওয়া গেছে। এই ৩৩ এমপির সঙ্গেও পাপিয়া নিয়মিত যোগাযোগ করতো। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত শনিবার যখন তাকে বিমানবন্দরে র‌্যাব আটক করে তখনও পাপিয়া তাদেরকে হুমকি ধামকি দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। তাদেরকে দেখে নেওয়ার জন্যও শাসিয়েছিলেন। তাদেরকে এটাও বলেছিলেন, আমি কে তোরা জানিস?

জিজ্ঞাসাবাদের সময় র‌্যাবের অমনমনীয় দৃঢ়তার মুখে শেষ পর্যন্ত পাপিয়া নমনীয় হন এবং তারপর তিনি তার অপরাধগুলো স্বীকার করতে থাকেন। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বলছে, এই কল লিস্ট মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে আনা হয়েছে। এই ১৫ দিনের রিমান্ডে যাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ, যাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন, তাদের ব্যাপারে তথ্য বের করবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়া ও তা স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী, সাব্বির আহমেদ ও শেখ তায়্যিবাকে অর্থপাচার ও জাল মুদ্রা রাখার অভিযোগে আটক করে র‌্যাব। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬০ লাখ টাকা, বিদেশি মদ, পিস্তলসহ গুলি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর থানায় আলাদা তিনটি মামলা হয়। বিমানবন্দর থানার মামলায় পাপিয়াসহ চারজনকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠালে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে নরসিংদী কলেজে ইন্টারমেডিয়েট প্রথম বর্ষে পড়ার সময় মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীর সঙ্গে পাপিয়ার পরিচয় হয়। এরপর সেই সম্পর্ক প্রেমে রূপ নেয়। তখন থেকেই পাপিয়া অপকর্ম শুরু করে। এর তিন বছর পর ২০০৯ সালে তারা বিয়ে করেন। ২০১০ সালে বিবাহিত অবস্থায় নরসিংদী পৌর ছাত্রলীগের পদ পান পান।

এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া তাদের। গড়ে তোলেন ‘কিউ অ্যান্ড সি’ নামের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। এই ক্যাডার বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের হাতে ও পিঠে ট্যাটু আঁকা আছে। বিয়ের সময় তেমন কিছু না থাকলেও গত ১০ বছরের ব্যবধানে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। যার বেশির ভাগই ২০১৮ ও ২০১৯ সালে অবৈধভাবে অর্জন করেছেন।

কথিত আছে, যাদের টাকা নেই তারা হয় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি বা চুরি করে না হয় আদিম ব্যবসার সাথে জড়িত হয়েই মূলধন তৈরি করে। এর প্রমাণও ভুরি ভুরি। আর এক শ্রেণির পুরুষ মানুষের হাতে যখন অসৎ পয়সা আসে সে তখন নিজেকে সম্রাট মনে করে। তখন তাঁরা যায় পাপিয়াদের কাছে, কারণ তারা প্রতিদিন নতুন নতুন পাপিয়ার জন্ম দেয় টাকার লোভ দেখিয়ে বা অন্য বিপদে ফেলে। আর দেশের বিভিন্ন খাতে যারা সম্রাট, তারা সম্রাট হলেই সে নতুন নতুন হেরেমখানা খুঁজে ফেরেন। অতৃপ্তি তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় ‘বেদি থেকে বেদিতে দিতে পূজার অর্ঘ্য’। তাই তারা সাহায্য নেয় ‘পাপিয়াদের মত দালালদের’।

মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন ও মুন্নুজান সুফিয়ানদের মতো নেত্রী তৈরির আশায় পাপিয়াদের দলে নেওয়া হলেও তারা ক্যাসিনো সেলিমদের সহযোগী হয়ে উঠেছে টাকার মোহে, ক্ষমতার মোহে। পাপিয়াদের মতো মনোরঞ্জনকারীদের যদি আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে ছেঁটে না ফেলে তা হলে ভবিষ্যৎ যে খুব অন্ধকার তা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকেই জানা যায়।

মানুষ যেভাবে জাতীয় পার্টি বা বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, একইভাবে তারা আওয়ামী লীগের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না তার গ্যারান্টি কই? আমাদের মনে রাখতে হবে যে আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মী সমর্থকরাও অনেকে কিন্তু এবার নগরীর মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে যান নি। এত এত উন্নয়নের পরেও এটা আওয়ামী লীগের জন্য একটা বিশেষ সতর্ক বার্তা।

এদিকে গত রোববার মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের যিনি মাতা, তাঁকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে।’ তিনি মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়ার নানা ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মায়ের জন্য আমাদের এখানে দাঁড়াতে হয়। এ লজ্জা রাখার জায়গা নেই আমাদের। দেশনেত্রী শুধু একজন নেতা নন। তিনি এই বাংলাদেশের সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রের মাতা।’

এর পরে লাইনে উনি যা বলতে গিয়েও বলতে পারেন নি তা হলো, ‘গণতন্ত্রের পিতার ছেলে আজ নির্বাসিত। তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, ‘তাঁদের আমলের মত করে পাপিয়াদের ব্যাপক বিস্তার হউক। নেশায় বুদ হয়ে ফুর্তিতে মেতে উঠুক বড় বড় আমলা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী সবাই। ‘করোনা ভাইরাস’এর মত পাপিয়া ভাইরাস আওয়ামী লীগের তৃনমূলে থাকা মূল দল, তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছড়িয়ে পড়ুক। যাতে করে বাংলার মানুষের মনে ভালো মন্দের বিচারের কোন সুযোগ না থাকে। বলতে না পারে যে, অমুক ভালো আর অমুক খারাপ।

নিউজ২৪.ওয়েব/ডেস্ক/মৌ দাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *