Get the Latest News & Videos from News24 > এক্সক্লুসিভ ভিডিও > বিউটি বোর্ডিংয়ে বসেছিল ষাট দশকের অগ্নিঝরা দিনগুলোর স্মৃতির হাট (ভিডিও সহ)

নিজস্ব প্রতিবেদন: পুরান ঢাকার বাংলাবাজারে জুবিলী স্কুলের পাশের গলিতে শতবর্ষী বিউটি বোর্ডিংয়ের আদি রূপ, গায়ের হলুদ রঙ, আকার যেমন ছিল তেমনি আছে। অগ্নিঝরা দিনগুলোর বহু স্মৃতি বয়ে চলেছে কালের স্বাক্ষী শতবর্ষী ক্ষয়িষ্ণু এই বিউটি বোর্ডিং। তবে, ইতিহাস বদলায় নি। ইতিহাস তেমনই আছে,থাকবে চিরকাল ইতিহাসেরই জায়গায়।।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে (….. মার্চ) ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর গুলিতে বিউটি বোর্ডিংয়ের মালিক… ও বোর্ডারসহ ১৭ জন শহীদ হয়েছেন।

যেসকল কিংবদন্তীর পদচারণায় বিউটি বোর্ডিং মুখরিত হতো, স্বাধীনতার ৪৯ বছরে তাঁদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। তবে, যাঁরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন,অবসর জীবন যাপন করছেন, সেইসব কীর্তিমান সতীর্থদের খোঁজে খোঁজে আবিষ্কার করা, নতুন প্রজন্মকে ঘটনাবহুল ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত করাই এ মিলনমেলার মূখ্য উদ্দেশ্য।

https://www.facebook.com/news24.website.bd/videos/506217606669231/?t=2

১৭ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার দিনটিও ইতিহাসের আরেকটি অংশ হয়ে স্মৃতির নতুন পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলে উল্লেখ করেন সহযোগী উদ্যোক্তা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক এআইজি মালিক খসরু পিপিএম।

আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত বিউটি বোর্ডিংয়ে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার জমেছিল জমজমাট স্মৃতির হাট। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিয়ে অসাধারণ এ স্মৃতি রোমন্থন মুহূর্তে সবাইকে করেছে নস্টালজিক।

শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিক ও সাংস্কৃতি অঙ্গণের প্রবীন নাগরিকদের নিয়ে এ এক অন্যরকম আড্ডার আসর।

ষাটের দশকে প্রয়াতঃ কবি শামসুর রহমান,সন্তোষ গুপ্ত, বেলাল চৌধুরী, সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরী, ফজলে লোহানিসহ বহু কিংবদন্তির পদচারণায় মুখরিত ছিল এ বিউটি বোর্ডিং। কথিত আছে, নেতাজি সুভাষ বসু, কবি নজরুল ইসলামও বিউটি বোর্ডিংয়ে এসেছিলেন।

বহু আন্দোলন সংগ্রামের সুতিকাগার বিউটি বোর্ডিংয়ের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করতে সাবেক ডিআইজি(অবঃ) ফিরোজ কবীর মুকুল সতির্থদের নিয়ে মিলনমেলার প্রথম আয়োজনটি করেছিলেন ২৫ বছর আগে।

ব্যতিক্রম এ আয়োজনের প্রধান উদ্যোক্তা সাবেক ডিআইজি ফিরোজ কবির মুকুল অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এর ধারাবাহিকতা অব্যহত রেখেছেন।

প্রধান সহ-উদ্যোক্তা সাবেক এআইজি মালিক খসরু পিপিএম বলেন, সোনালী অতিতকে ধারন করেই বর্তমান। বর্তমানকে ধারন করে এগুতে হবে আগামীর পথে। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে নতুন প্রজন্মকে আমাদের ইতিহাস জানাতে হবে।

মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ কবির এর ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও অর্থায়নে এ মহতি উদ্যোগটি ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে বিগত ২৫ বছর ধরে।

সতীর্থরা প্রাণের টানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুঁটে এসে এ মিলনমেলায় মিলিত হোন। এ অনুভূতি প্রকাশের কোন ভাষা নেই।।

১৭ জানুয়ারি শুক্রবার সকাল থেকে ছোটছোট গ্রুপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে খোশগল্পে মেতে উঠেছিলেন সতীর্থরা।
কেউ বলছিলেন রিটায়ার্ডদের গেটটুগেদার। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন এমপি কথা কেড়ে নিয়ে মজা করে বললেন, ‘আমাদের ‘টায়ার’ নেই,তাই আমাদের ‘রিটায়ারও’ নেই!

একজন আরেকজনকে জড়িয়ে আবেগে চুমু খাচ্ছিলেন।এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।

সকালে চিতল পিঠা ও চা-কফির নাস্তা দিয়ে শুরু, দুপুরে আলুভর্তা, মিক্সড সবজি, আইড় মাছের বিশাল টুকরো, মুরগির রেজালা দিয়ে লাঞ্চ এবং শেষবেলায় বিদায়কালে পাটিসাপটা পিঠা-চা’র আপ্যায়নের মাধ্যমে ভাঙলো বাৎসরিক মিলনমেলা।

গতানুগতিক আনুষ্ঠানিকতা ছিলনা, যাঁরযাঁর মতো করে স্মৃতিচারণ ও খোশগল্পে দিনটি কাটিয়েছেন নানা ভঙিমায়। আয়োজনটির নির্দিষ্ট কোন নাম নেই। অতুলনিয় শিরোনামহীন এক অনুষ্ঠান।

ষাটের দশকের অগ্নিঝরা দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেই পার করে দিয়েছেন পুরোটা দিন। বলা হচ্ছে, স্মৃতিচারণের আসর, কেউ বলেছেন, স্মৃতির হাট। মেরাথন আড্ডায় উঠে এসেছে সুখদুঃখের অনেক গল্প। বয়সের ভারে ন্যুজ কয়েকজনের স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি সবাইকে আপ্লূত করেছে।

স্বাধীনতা উত্তর ঢাকার প্রথম মুক্তিযোদ্ধা এসপি মাহবুব (বীরবিক্রম)প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এখানে যাঁরা এসেছেন প্রত্যেকে একেকজন একেকটা বিশাল গল্প। সবার গল্প একসঙ্গে হবে মহাকাব্য। সতীর্থ অনেকেই পরপারে চলে গিয়েছেন। অনেকে বার্ধক্যজনিত কারণে আসতে পরেননি। এভাবেই প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে প্রতিবছর আমরা কাউকে না কাউকে হারাচ্ছি। ছোট হয়ে আসছে আমাদের পৃথিবী।

আয়োজক ফিরোজ কবিরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এসপি মাহবুব বলেন, এ এক অভূতপূর্ব আয়োজন। এর তুলনা নেই।

মহতী এ মিলনমেলায় উপস্থিত হয়েছিলেন- ফিরোজ রশিদ এমপি, মোস্তফা মহসিন মন্টু, এ্যাড, নুরুল মজিদ এমপি(শিল্পমন্ত্রী), বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড.সালেউদ্দন আহমেদ, ফকির আলমগীর, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ, খালেদ মুহাম্মদ আলী,মোজাফফর হোসেন পল্টু, এমএ জলিল, নায়ক ফারুক পাঠান এমপি, নজরুল ইসলাম, এবিএম নুরুল ইসলাম নুরা, কামরুল হাসান কামাল, কামাল লোহানি, আনিসুর রহমান, এনামুল হক, মুকুল ইলাহি, এসএম আনসারি।

অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম দস্তগীর ও খসরুসহ অনেক সতীর্থ।

আরো যাঁরা এসেছেন তাঁদের অন্যতম আঃহান্নান (আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের চীফ প্রসিকিউটর), ফয়েজার মোহাম্মদ জোবায়ের, ড.কাজী মেসবাহউদ্দিন, নাসের বক্তিয়ার(অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি), মুকুল চৌধুরী, নুরুল আমিন নুরা, আসফাকুজ্জামান মিনু, খোরশেদ আলম চঞ্চল, এ এম বাবর, ড.সাহেদ হাসান প্রমুখ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *