The main component of a healthy environment for self esteem is that it needs be nurturing. It should provide unconditional warmth.
বিষেরবাঁশী ডেস্ক: আজ বিশ্ব কিডনি দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও ১২৬টি দেশে বিশ্ব কিডনি দিবস উদযাপিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সুস্থ কিডনি সবার জন্য সর্বক্ষেত্রে।’ মানবদেহে কিডনির ভূমিকা ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বের সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা কিডনি দিবসের প্রধান লক্ষ্য।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৮৫ কোটি লোক যে কোনো ধরনের কিডনি রোগে আক্রান্ত। বিশ্বে প্রতি বছর ২৪ লক্ষাধিক রোগী জটিল কিডনি রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। শুধু তাই নয়, কিডনি রোগকে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর ষষ্ঠতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই বিশ্ব কিডনি দিবস উদযাপনের লক্ষ্য হচ্ছে—কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা, কিডনি রোগের ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো শনাক্ত এবং এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর কীভাবে জীবনযাপন করা যায়। বর্তমানে কিডনি রোগের প্রধান ঝুঁকির কারণ ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ। হার্ট ও মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহে ব্যাঘাত, হঠাৎ কিডনি অকেজো হওয়া, স্থূলতা এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগের কারণেও কিডনি রোগ হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্বে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ তাৎক্ষণিক কিডনি অকেজো রোগে আক্রান্ত এবং প্রতি বছর ১৭ লাখেরও বেশি লোক হঠাৎ কিডনি অকেজো হয়ে মারা যায়। বর্তমানে ৭৫ বছর বয়সের ওপরে শতকরা ৫০ ভাগ লোক জটিল কিডনি রোগে ভুগছে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, বংশগত কিডনি রোগের উপস্থিতি, ধূমপান এবং বয়সের মাত্রা ৬০-এর ঊর্ধ্বে হলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আমাদের শরীরে মেরুদন্ডের দুইপাশে অনেকটা শিমের বিচি আকৃতির লম্বা ৯ থেকে ১১ সেমি দুটি কিডনি রয়েছে। কিডনির প্রধান কাজ হচ্ছে মূত্র তৈরির মাধ্যমে শরীরের সব ধরনের খাবার ও ওষুধের পরিপাক হওয়ার পর অপ্রয়োজনীয় উপাদান বের করা, শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, পানির ভারসাম্য রক্ষা করা, অম্ল-ক্ষারের সমতা রক্ষা করা এবং শরীরে খনিজ উপাদানের মাত্রা সঠিক রাখা। এছাড়াও রক্ত তৈরির জন্য ও হাড়ের অস্থিমজ্জার পুনর্গঠনের জন্য ইরাইথ্রোপয়েটিন এবং কার্যত ভিটামিন ডি তৈরি করা। কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে উপরোক্ত বিষয়গুলোর কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়। ফলে একজন কিডনি রোগীর উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, ক্ষুধামন্দা ও বমি উপসর্গ দেখা দেয়। বিশ্ব কিডনি দিবসের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে—রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিডনি রোগ শনাক্ত করা এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
অল্প খরচেই কিডনি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। বলাবাহুল্য উচ্চরক্তচাপ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাপা যায় এবং অ্যালবুমিন ও রক্তে গ্লুকোজ খুব কম খরচে নির্ণয় করা যায়। উন্নত দেশের তুলনায় স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে কিডনি রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে শতকরা ৮০ ভাগ রোগী কিডনি সংযোজন ও ডায়ালাইসিস চিকিৎসা গ্রহণ করেন। স্বল্প উন্নত দেশে শতকরা ১০ ভাগ রোগী ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজনের সুযোগ পান। এছাড়া স্বল্পোন্নত দেশে শতকরা ৭০ ভাগ ডায়ালাইসিস রোগী অর্থের অভাবে তিন মাসের বেশি চিকিৎসা চালাতে পারেন না, ফলে অল্প সময়ে মৃত্যুবরণ করেন।
অবকাঠামোর অভাব, ওষুধের স্বল্পতা ও উচ্চমূল্য, পুষ্টিহীনতা এবং রোগের সংক্রমণের কারণে স্বল্পোন্নত দেশে কিডনি সংযোজনের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম।
কিডনি রোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পরিমিত পানি পান করা, সবল ও কর্মক্ষম থাকা, নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করা, ধূম ও মদ্যপান হতে বিরত থাকা, বেদনানাশক ওষুধ পরিহার করা এবং সর্বোপরি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে কিডনি রোগ শনাক্তকরণের জন্য স্বল্প ব্যয়ে দরকারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।
লেখক : সাবেক পরিচালক, জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউট, ঢাকা
বিষেরবাঁশী ডেস্ক/সংবাদাদাতা/হৃদয়